28
যিহূদার রাজা আহস
আহস কুড়ি বছর বয়সে রাজা হলেন, এবং জেরুশালেমে তিনি ষোলো বছর রাজত্ব করলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দাউদের মতো তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যা যা ভালো, তা করেননি। তিনি ইস্রায়েলের রাজাদের পথে চলেছিলেন এবং বায়াল-দেবতাদের পূজার্চনার জন্য তিনি প্রতিমার মূর্তিও তৈরি করলেন। বিন-হিন্নোম উপত্যকায় তিনি পশুবলি দিয়ে সেগুলি জ্বালিয়ে দিতেন এবং সদাপ্রভু যে পরজাতিদের ইস্রায়েলীদের সামনে থেকে দূর করে দিলেন, তাদেরই ঘৃণ্য প্রথানুসারে তিনি তাঁর নিজের সন্তানদের বলিরূপে উৎসর্গ করলেন। প্রতিমাপুজোর উঁচু উঁচু স্থানগুলিতে, পাহাড়ের চূড়ায় ও ডালপালা বিস্তার করা প্রত্যেকটি গাছের তলায় তিনি বলি উৎসর্গ করলেন ও ধূপ জ্বালিয়েছিলেন।
তাই তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁকে অরামের রাজার হাতে সঁপে দিলেন। অরামীয়েরা তাঁকে পরাজিত করল এবং তাঁর প্রজাদের মধ্যে অনেককে বন্দি করল ও তাদের দামাস্কাসে নিয়ে গেল।
তাঁকে সেই ইস্রায়েলের রাজার হাতেও সঁপে দেওয়া হল, যিনি তাঁর অনেক লোকজনকে মেরে ফেলেছিলেন। রমলিয়ের ছেলে পেকহ একদিনেই যিহূদায় 1,20,000 সৈন্যকে হত্যা করলেন—কারণ যিহূদা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে পরিত্যাগ করল। ইফ্রয়িমীয় এক যোদ্ধা সিখ্রি রাজপুত্র মাসেয়কে, প্রাসাদের তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা অস্রীকামকে, এবং রাজার পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইল্‌কানাকে হত্যা করল। ইস্রায়েলের লোকেরা যিহূদায় বসবাসকারী তাদেরই জাতভাই ইস্রায়েলীদের কাছ থেকে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে মোট দুই লাখ লোককে বন্দি করল। এছাড়াও তারা প্রচুর পরিমাণে লুটসামগ্রীও দখল করে সেগুলি শমরিয়ায় বয়ে নিয়ে গেল।
কিন্তু ওদেদ নামে সদাপ্রভুর একজন ভাববাদী সেখানে উপস্থিত ছিলেন, এবং সৈন্যদল যখন শমরিয়ায় ফিরে এসেছিল, তখন তিনি তাদের সাথে দেখা করতে গেলেন। তিনি তাদের বললেন, “যেহেতু তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিহূদার উপর ক্রুদ্ধ হলেন, তাই তিনি তাদের তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু রাগের বশে তোমরা এমনভাবে তাদের কোতল করেছ যে তার রেশ স্বর্গ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। 10 এখন আবার তোমরা যিহূদা ও জেরুশালেমের পুরুষ ও মহিলাদের ক্রীতদাস-দাসী করতে চাইছ। কিন্তু তোমরাও কি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে করা পাপের দোষে দোষী নও? 11 এখন আমার কথা শোনো! তোমাদের জাতভাই যেসব ইস্রায়েলীকে তোমরা বন্দি করে এনেছ, তাদের ফেরত পাঠিয়ে দাও, কারণ সদাপ্রভুর ভয়ংকর ক্রোধ তোমাদের উপর অবস্থান করছে।”
12 তখন ইফ্রয়িমের নেতাদের মধ্যে কয়েকজন—যিহোহাননের ছেলে অসরিয়, মশিল্লোমোতের ছেলে বেরিখিয়, শল্লুমের ছেলে যিহিষ্কিয়, ও হদলয়ের ছেলে অমাসা—সেই লোকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, যারা যুদ্ধ করে ফিরে এসেছিল। 13 “তোমরা এই বন্দিদের এখানে আনবে না,” তারা বললেন, “তা না হলে আমরাই সদাপ্রভুর কাছে দোষী হয়ে যাব। আমরা যত পাপ ও অপরাধ করেছি, তার সাথে কি তোমরা এই পাপটিও যোগ করতে চাইছ? কারণ আমাদের পাপের পরিমাণ ইতিমধ্যেই অনেক বেড়ে গিয়েছে, আর ইস্রায়েলের উপর তাঁর ক্রোধ অবস্থান করে আছে।”
14 অতএব সৈনিকরা বন্দিদের ও লুটসামগ্রীগুলি কর্মকর্তাদের ও সমগ্র জনসমাজের সামনে এনে রেখেছিল। 15 যাদের নামোল্লেখ করা হয়েছে, তারা লুটসামগ্রী থেকে কাপড়চোপড় নিয়ে বন্দিদের মধ্যে যাদের পরনে কাপড় ছিল না, তাদের উলঙ্গতা ঢেকে দিলেন। তারা তাদের কাপড়চোপড়, চটিজুতো, খাবারদাবার, ও ব্যথা কমানোর মলম দিলেন। যারা যারা শারীরিক দিক থেকে দুর্বল ছিল, তাদের গাধার পিঠে বসিয়ে দেওয়া হল। এইভাবে তারা খেজুর গাছের নগর যিরীহোতে, তাদের জাতভাই ইস্রায়েলীদের কাছে তাদের পৌঁছে দিলেন, এবং পরে শমরিয়ায় ফিরে এলেন।
16 সেই সময় রাজা আহস সাহায্য চেয়ে আসিরিয়ার রাজাদের* 28:16 অথবা, রাজার (2 রাজাবলি 16:7 পদও দেখুন) কাছে লোক পাঠালেন। 17 ইদোমীয়েরা আবার এসে যিহূদাকে আক্রমণ করল এবং লোকদের বন্দি করে নিয়ে গেল, 18 অন্যদিকে আবার ফিলিস্তিনীরা পাহাড়ের পাদদেশে ও যিহূদার নেগেভে অবস্থিত নগরগুলিতে হানা দিয়েছিল। তারা বেত-শেমশ, অয়ালোন ও গদেরোতের সাথে সাথে সোখো, তিম্না ও গিমসো এবং সেখানকার চারপাশের গ্রামগুলিও দখল করে সেগুলিতে বসবাস করতে শুরু করল। 19 ইস্রায়েল-রাজ 28:19 অর্থাৎ, যিহূদা; 2 বংশাবলিতে প্রায়ই যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে আহসের জন্যই সদাপ্রভু যিহূদাকে নত করলেন, কারণ যিহূদায় আহস অসদাচারের উদ্যোক্তা হলেন এবং সদাপ্রভুর প্রতি সবচেয়ে বেশি অবিশ্বস্ত হলেন। 20 আসিরিয়ার রাজা তিগ্লৎ-পিলেষর 28:20 অথবা, তিল্গৎ-পিলনেষর তাঁর কাছে এলেন, কিন্তু তিনি আহসকে সাহায্য না করে বরং তাঁকে কষ্টই দিলেন। 21 সদাপ্রভুর মন্দির থেকে এবং রাজপ্রাসাদ থেকে ও কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আহস বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে সেগুলি আসিরিয়ার রাজাকে উপহার দিলেন, কিন্তু তাতেও তাঁর কোনও লাভ হয়নি।
22 তাঁর এই কষ্টের সময় রাজা আহস সদাপ্রভুর প্রতি আরও বেশি অবিশ্বস্ত হয়ে গেলেন। 23 তিনি দামাস্কাসের সেই দেবতাদের কাছে বলি উৎসর্গ করলেন, যারা তাঁকে পরাজিত করল; কারণ তিনি ভেবেছিলেন, “যেহেতু অরামের রাজাদের দেবতারা তাদের সাহায্য করেছে, তাই আমিও তাদের কাছে বলি উৎসর্গ করব, যেন তারা আমাকেও সাহায্য করে।” কিন্তু তারাই তাঁর ও সমগ্র ইস্রায়েলের পতনের কারণ হল।
24 আহস ঈশ্বরের মন্দির থেকে আসবাবপত্রাদি সংগ্রহ করে সেগুলি কেটে টুকরো টুকরো করে দিলেন। সদাপ্রভুর মন্দিরের দরজা তিনি বন্ধ করে দিলেন এবং জেরুশালেমের প্রত্যেকটি রাস্তার কোনায় কোনায় তিনি যজ্ঞবেদি খাড়া করে দিলেন। 25 যিহূদার প্রত্যেকটি নগরে অন্যান্য দেবতাদের উদ্দেশে বলির পশু পোড়ানোর জন্য তিনি পূজার্চনার উঁচু উঁচু স্থান তৈরি করে দিলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন।
26 শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, তাঁর রাজত্বকালের অন্যান্য সব ঘটনা ও তাঁর সব কাজকর্মের বিবরণ যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের পুস্তকে লেখা আছে। 27 আহস তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে চিরবিশ্রামে শায়িত হলেন এবং তাঁকে জেরুশালেম নগরেই কবর দেওয়া হল, কিন্তু ইস্রায়েলের রাজাদের কবরে তাঁকে রাখা হয়নি। তাঁর ছেলে হিষ্কিয় রাজারূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন।

*28:16 28:16 অথবা, রাজার (2 রাজাবলি 16:7 পদও দেখুন)

28:19 28:19 অর্থাৎ, যিহূদা; 2 বংশাবলিতে প্রায়ই যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে

28:20 28:20 অথবা, তিল্গৎ-পিলনেষর