পবিত্র ইঞ্জিল শরিফ চৌতা ছিপারা
আল-হান্নান
পরিচিতি
আল-হান্নান ছিপারার তালিম অইলো, হজরত ইছা আল-মসীউ অইলা আল্লার কালাম, বা কালিমাতুল্লা। অউ কালাম অইলা, স্বয়ং আল্লার বুলি বা আওয়াজ, যে আওয়াজে তামাম জগতর জনম। আল্লার মর্জিয়ে অউ কালামে মানষর ছুরত পাইলা, আর মানুষ রুপে দুনিয়াত তশরিফ আনলা। হজরত ইছাউ অইলা আল্লার কালাম, ই কথা কইতে গেলে আমরা বুজতাম পারি, খালি তান উছিলায়উ আমরা মহান আল্লা পাকর আসল দিদার বা পরিচয় পাই।
আমরা আরো দেখি, দুনিয়াত আইয়া হজরত ইছায় বউত কেরামতি-কুদরতি কাম করছইন। এরমাজ থাকি অউ ছিপারাত নিশানা বা চিন হিসাবে বিশেষ সাতখান কেরামতির বিস্তারিত বয়ান করা অইছে, যে কাম থাকি বুজা যায়, হজরত ইছা আল-মসীর জবানর বুলিউ আল্লার কালাম, তান কাম অইলো আল্লারউ কাম। ই ছিপারার ২০ নম্বর রুকুর ৩১ আয়াতো আছে, “খালি অউ ঘটনা অকল লেখা অইছে, যাতে অতা তিলাওত করিয়া তুমরা ইমান আনো, হজরত ইছাউ আল্লা পাকর ওয়াদা করা হউ আল-মসী, তাইনউ ইবনুল্লা, আল্লার খাছ মায়ার জন, আর ইমান আনিয়া যাতে তান উছিলায় তুমরা আখেরি জিন্দেগি হাছিল করো।” (‘আল-মসী’, ‘ইবনুল্লা’, ‘আল্লার খাছ মায়ার জন’, ই সব নাম-উপাধির মানি ভাংগিয়া দেখবা কিতাবর হেশে ‘কিতাব সুত্র’ নামর অংশত।)
ই ছিপারাত হজরত ইছায় ‘আমিউ’ কইয়া নিজর সাতখান বিশেষ গাইবি নাম রাখছইন। অউ সাতো নাম অইলোগি: আমিউ জিন্দেগি-রুটি; আমিউ দুনিয়ার নুর; আমিউ দুয়ার; আমিউ আসল রাখাল; আমিউ কিয়ামত আর জিন্দেগি; আমিউ পথ, হক আর জিন্দেগি; আর, আমিউ আসল আংগুর গাছ। ই গাইবি নাম অকল দিয়া বুজা যায়, খালি তান উছিলায় আল্লার দিদার পাওয়া যায়, খালি তাইনউ তরানেআলা, দুনিয়ার নাজাত দেওরা জন, যেইন আদম জাতিরে ইবলিছর কবজা থাকি মুক্ত করইন।
লেখক পরিচিতি আর সময়
আল্লা পাকর হুকুমে অউ ছিপারা লেখছইন হজরত হান্নান (রা:)। তাইন হজরত ইছা আল-মসীর ১২ জন সাহাবির মাজর একজন। হজরত ইছা দুনিয়া থাকি বেহেস্তো তশরিফ নেওয়ার অনুমান ৪০-৫০ বছর বাদে অউ ছিপারা কিবাবর আকারে লেখা অইছে।
এরমাজে আছে,
(ক) আল্লার কালাম মানুষ ছুরতে নাজিল ১:১-১৮ আয়াত
(খ) হজরত এহিয়া আর হজরত ইছা আল-মসীর পয়লা উম্মত ১:১৯-৫১
(গ) আল-মসীর তবলিগ আর কেরামতি কামর বয়ান ২-১২ রুকু
(ঘ) উম্মত অকলরে হজরত ইছার আখেরি তালিম ১৩-১৭ রুকু
(ঙ) হজরত ইছার উপরে জুলুম-মছিবত আর তান উফাত ১৮-১৯ রুকু
(চ) হজরত ইছা মউতর বাদে জিন্দা অইলা আর বউতে দেখলা ২০-২১ রুকু
আল্লার কালাম মানুষ ছুরতে নাজিল (১:১-১৮)
1
পয়লাউ কালাম আছলা, কালাম আল্লার লগে আছলা আর অউ কালাম নিজেউ আল্লা আছলা। হকল পয়লা অউ কালাম আল্লার লগে আছলা। অউ কালামর মাজদি হক্কলতা পয়দা করা অইছিল, যততা পয়দা করা অইছে, এর কুনুতাউ তানরে ছাড়া পয়দা অইছে না। তান মাজে জিন্দেগি আছিল, হউ জিন্দেগিউ অইলো মানষর নুর। অউ নুর আন্দারির মাজে জলের, অইলে আন্দাইরে ই নুররে কবজা করতো পারছে না।
আল্লায় এহিয়া নামর একজন মানষরে দুনিয়াত পাঠাইলা। অউ নুরর বেয়াপারে সাক্ষি দিবার লাগি তানরে পাঠাইল অইলো, যাতে তান জবানবন্দি হুনিয়া মানষে ইমান আনে। তাইন নিজে হি নুর আছলা না, অইলে নুরর বেয়াপারে সাক্ষি দিবার লাগি দুনিয়াত আইছলা। আসল নুর অইলা হউ জন, যেইন হক্কল মানষরে নুর দান করইন, তাইন দুনিয়াত তশরিফ আনরা।
10 অউ দুনিয়াত তাইন আছলা, দুনিয়া তান উছিলায় পয়দা অইছে, তা-ও দুনিয়ার মানষে তানরে চিনলো না। 11 তাইন নিজর জমিনো আইলা, তান নিজর মানষেউ তানরে কবুল করলো না। 12 অইলে যতো জনে তান উপরে ইমান আনিয়া তানরে কবুল করলা, এরা পরতেক জনরে তাইন আল্লার খাছ আওলাদ, মানি মায়ার জন বনার এখতিয়ার দিলা। 13 আসলে অউ জন অকলর জনম তো মানষর লউ থাকি অইছে না, শরিলর খাইশ বা মানষর ইচ্ছায়ও অইছে না, ইটা খালি আল্লা থাকিউ অইছে।
14 অউ কালামউ মানুষ ছুরতে জনম লইলা আর আমরার মাজে বসতি করলা। বাফর খাছ আওলাদ হিসাবে তাইন যে জালাল আর মহিমা পাইছইন, হউ জালাল আর মহিমা আমরা দেখছি। তাইন তো হক আর রহমতে ষোলআনা কামিল।
15 এহিয়া নবীয়ে তান বেয়াপারে বড় গলায় সাক্ষি দিলা, কইলা, “এইনউ তো হউ জন, যেন বেয়াপারে আমি আগে কইছলাম, আমার বাদে একজনে তশরিফ আনরা তাইন আমা থাকিও মহান, আমার বউত আগ থাকিউ তো তাইন আছইন।”
16 তাইন ষোলআনা কামিল অওয়ায় আমরা হকলে রহমতর উপরেদি আরো রহমত পাইছি। 17 মুছা নবীর মারফতে আল্লায় শরিয়ত দান করছিলা, অইলে ইছা আল-মসীর মারফতে হক আর রহমত আইছে। 18 আল্লারে তো কেউ কুনুদিন দেখছে না। তান লগে রওরা হউ একমাত্র পুত, মানি তান খাছ মায়ার জন, যেইন স্বয়ং মউলা, তাইনউ আল্লারে জাইর করছইন।
হজরত এহিয়া (আ:) আর হজরত ইছা আল-মসীর পয়লা উম্মত (১:১৯-৫১)
হজরত এহিয়ার (আ:) পরিচয়
19 ইহুদি নেতা অকলে জেরুজালেম টাউন থাকি যেবলা কয়জন ইমাম আর লেবি সমাজর কিছু মানষরে এহিয়া নবীর গেছে পাঠাইলা, অউ সময় এহিয়ায় এরার গেছে সাক্ষি দিলা। তারা যেবলা জিকাইলা, “ছাব, আপনে আসলে কে?” 20 এহিয়া নবীয়ে কুন্তা না লুকাইয়া স্বীকার অইয়া কইলা, “আমি তো আল-মসী নায়।” 21 তেউ তারা তানরে জিকাইলা, “তে আপনে কে? আপনে ইলিয়াছ নবী নি?” তাইন কইলা, “না, আমি ইলিয়াছ নায়।” অউ তারা জিকাইলা, “তে আপনে কিতা আগর জমানার হউ নবী নি?” তাইন জুয়াপ দিলা, “জি না।” 22 তারা হিরবার তানরে জিকাইলা, “তাইলে আপনে কে? আমরারে যেরা পাঠাইছইন, আমরা ফিরিয়া গিয়া কিতা কইতাম, আপনার নিজর পরিচয় কিতা?” 23 এহিয়ায় জুয়াপ দিলা, “আমি অইলাম হউ আওয়াজ, যেন বেয়াপারে হজরত ইশায়া নবীয়ে বাতাই গেছইন,
 
মরুভুমির মাজে জুরে জুরে একজনে এলান কররা,
তুমরা মালিকর পথ ছহি করো।”
 
24 এহিয়া নবীর গেছে যেরারে পাঠাইল অইছিল, এরা আছলা ফরিশি সমাজর মানুষ। 25 তারা তানরে জিকাইলা, “আপনে যেবলা আল-মসীও নায়, ইলিয়াছ নবীও নায় বা আগর জমানার হউ নবীও নায়, তে আপনে কেনে মানষরে তৌবার গোছল দিরা?” 26 এহিয়া নবীয়ে তারারে জুয়াপ দিলা, “আমি তো মানষরে পানি দিয়া তৌবার গোছল করাইরাম, অইলে আপনারার মাজে অউলা এক বুজুর্গ জন আছইন, যেনরে আপনারা চিনইন না। 27 এইন হউ বুজুর্গ, যেইন আমার বাদে তশরিফ আনার কথা আছিল। তান পাওর জুতার ফিতা গেছা খুলার লাখও আমি নায়।”
28 জর্দান গাংগর আরক পারো বায়ত-আনিয়া গাউত, এহিয়া নবী যেখানো তৌবার গোছল করানিত আছলা, হনো অউ ছওয়াল-জুয়াপ অইলো।
আল্লাই মেড়ার বাইচ্চা
29 বাদর দিন এহিয়া নবীয়ে দেখলা হুজুর ইছা তান গেছে আইরা, দেখিয়া কইলা, “অউ দেখরায় নি আল্লাই মেড়ার বাইচ্চা, যেন উছিলায় হক্কল মানষর গুনার মাফি অয়। 30 এইন অইলা হউ জন, যেন বেয়াপারে আমি আগে কইছলাম, আমার বাদে একজনে তশরিফ আনরা, আসলে তাইন আমার আগ থাকিউ আছইন, আর তাইন আমা থাকিও ইজ্জতি জন। 31 আগে তো আমি তানরে চিনতাম না, অইলে বনি ইসরাইলর মাজে তাইন যাতে পরিচিতি পাইন, অতার লাগি আমি আগে আইয়া মানষরে পানিদি তৌবার গোছল করাইরাম।”
32 বাদে এহিয়া নবীয়ে অউ সাক্ষি দিলা, কইলা, “আমি দেখলাম কইতরর ছুরতে পাক রুহ আছমান থাকি লামিয়া আইলা, আইয়া এন উপরে আজিলা। 33 আমি তো তানরে চিনতাম না, অইলে তৌবার গোছল করানির লাগি যেইন আমারে বেজিছইন, তাইন আমারে বাতাই দিছইন যেন, আল্লাই পাক রুহরে যার উপরে লামিয়া আইতে দেখবায়, এইনউ হউ জন, যেইন মানষরে পাক রুহদি তরিকাবন্দি দিবা। 34 তে আমি ইতা দেখলাম, দেখিয়া হারি সাক্ষি দিরাম, এইনউ ইবনুল্লা, আল্লার খাছ মায়ার জন।”
হজরত ইছার পয়লা সাহাবি
35 বাদর দিন এহিয়া নবী আর তান দুইজন উম্মত হিরবার হউ জাগাত আইলা। 36 অউ সময় হজরত ইছা আটিয়া যাইরা, তানরে দেখিয়া এহিয়ায় কইলা, “অউ দেখরায় নি আল্লাই মেড়ার বাইচ্চা।” 37 এহিয়া নবীর অউ কথা হুনিয়া হউ দুইও জন ইছার খরে খরে রওয়ানা অইগেলা। 38 ইছায় খরেদি ফিরিয়া এরারে দেখলা, দেখিয়া কইলা, “কিতাবা, তুমরা কিতা চাও?” তারা জুয়াপ দিলা, “রব্বি, (মানি উস্তাদ), আপনে কুয়াই থাকইন?” 39 ইছায় তারারে কইলা, “আও না, আইয়া দেখিয়া যাও।” তেউ তারা তান লগে গেলা, গিয়া দেখলা তাইন কুন জাগাত থাকইন, আর তারাও আস্তা দিন তান লগে রইলা। অউ সময় আছরর অখত আইচ্ছে।
40 এহিয়া নবীর কথা হুনিয়া যে দুইজন ইছার খরে খরে গেছলা, এরার একজনর নাম অইলো আন্দ্রিয়াছ, এন ভাইর নাম সাইমন-পিতর। 41 অউ আন্দ্রিয়াছে পয়লা তান ভাই সাইমনরে তুকাইয়া বার করিয়া কইলা, “ভাইছাব হুনছো নি, আমরা তো আল-মসীরে দেখছি।” আল-মসীর মানি অইলো আল্লার খেলাফতি পাওয়া জন। 42 আন্দ্রিয়াছে সাইমনরে লইয়া ইছার গেছে আইলা। ইছায় সাইমনর বায় চাইয়া কইলা, “তুমি তো সাইমন বিন ইউহান্না, অইলে অখন থাকি তুমারে কৈফা নামে ডাকা অইবো।” কৈফা মানি পিতর, বা পাথর।
43 বাদর দিন ইছায় নিয়ত করলা, গালিল জিলাত যাইতাগি। অউ সময় তাইন ফিলিফরে দেখলা, দেখিয়া কইলা, “ও ফিলিফ আও, আইয়া আমার উম্মত অও।” 44 ফিলিফ আছলা বায়ত-ছয়দা গাউর মানুষ। আন্দ্রিয়াছ আর পিতরর বাড়িও আছিল অউ গাউত। 45 ফিলিফে নথনেলরে তুকাইয়া বার করিয়া কইলা, “মুছা নবীর তৌরাত কিতাবো আর আছমানি নবী অকলর ছহিফাত যেন কথা লেখা আছে, আমরা তো তানরে দেখছি। তাইন তো নাছারত গাউর ইছা, তান বাফর নাম ইউছুফ।” 46 ইখান হুনিয়া নথনেলে ফিলিফরে কইলা, “ধুত! নাছারত থাকি ভালা কুন্তা বারয় নি?” ফিলিফে কইলা, “তে আইয়া দেখো।”
47 ইছায় দেখলা, নথনেল তান গেছে আইরা, দেখিয়া কইলা, “অউ দেখরায় নি একজন খাটি বনি ইসরাইলি। তার মাজে কুনু ধুন্দুর-মুন্দুর নাই।” 48 তেউ নথনেলে ইছারে জিকাইলা, “আপনে আমারে কেমনে চিনলা?” ইছায় জুয়াপ দিলা, “হুনো, তুমারে ডাকিবার আগে তুমি যেবলা হউ ডুমুর গাছর তলে আছলায়, হউ সময় আমি তুমারে দেখছি।” 49 ইখান হুনিয়া নথনেলে ইছারে কইলা, “হুজুর, আপনেউ তো ইবনুল্লা, আল্লার খাছ মায়ার জন। আপনেউ বনি ইসরাইলর বাদশা।” 50 ইছায় তানরে কইলা, “তুমারে হউ ডুমুর গাছর তলে দেখছি অখান কওয়ায় তুমি ইমান আনলায় নি? হুনো, এর থাকিও আরো বউত বড় বড় কেরামতি তুমি দেখবায়নে।” 51 বাদে ইছায় কইলা, “আমি তুমরারে হক কথা কইরাম, তুমরা দেখবায় বেহেস্ত খুলিগেছে, আর আল্লার ফিরিস্তা অকল আমি বিন-আদমর উপরে উঠা-লামা কররা।”